ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারের চার পৌরসভাসহ ৭১ ইউনিয়নে আড়াই বছর ধরে সার্ভার সিস্টেম বন্ধ, চরম দুর্ভোগে জেলাবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার :: ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে গত ৩০ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে কক্সবাজারের চার পৌরসভাসহ ৭১টি ইউনিয়নের সার্ভার সিস্টেম। ফলে জন্ম মৃত্যু সনদসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ সেবা বন্ধ রয়েছে কক্সবাজার জেলায়।

এনিয়ে গত ৫ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট হলেও সার্ভার সিস্টেম নিয়ে জটিলতা এখনও কাটেনি। ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গা ঢলের পর থেকে বন্ধ রয়েছে কক্সবাজার জেলার সার্ভার সিস্টেম। বন্ধ থাকা জন্ম ও মৃত্যু সনদসহ অন্যান্য সেবাসমূহ ফের চালু করার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে কক্সবাজার পিপল্‌স ফোরাম, আমরা কক্সবাজারবাসীসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।

আন্দোলনের মুখে জেলা প্রশাসক ‘খুব শীঘ্রই’ সার্ভার স্টেশন খুলে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও সেই আশ্বাস এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। সার্ভার স্টেশন খুলে দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে গত ৫ নভেম্বর নাসরিন সিদ্দিকা লিনা নামের সুপ্রীম কোর্টের এক আইনজীবী ও কক্সবাজারের বাসিন্দা বাদী হয়ে হাইকোর্টে এক রিট আবেদন করেন।

আবেদনে স্থানীয় সরকার সচিব, স্থানীয় সরকারের বিভাগের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের রেজিস্ট্রার জেনারেল, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে বিবাদী করা হয়। রিটে কক্সবাজারের ৪টি পৌরসভা এবং ৭১টি ইউনিয়নের জন্ম নিবন্ধন পুনরায় শুরু করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি জন্ম নিবন্ধন পুনরায় শুরু করতে বিবাদীদের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রীয়য়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েও রুল জারি করা হয়।

এছাড়াও ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে জন্ম নিবন্ধন করতে না পারা শিশুদের জন্ম নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়ার নির্দেশনা জারির আবেদনও জানানো হয়েছে। সার্ভার চালুর বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালউদ্দিনের উপস্থিতিতে গত ১৩ জানুয়ারী কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি বিশেষ বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এখনও সার্ভার সিস্টেম খুলে দেওয়া হয়নি।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার পিপল্‌স ফোরামের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী ও আমরা কক্সবাজারবাসী সংগঠনের সমন্বয়ক নাজিমউদ্দিন বলেন, বার বার আশ্বাস দেওয়ার পরও সার্ভার খুলে দেওয়া হচ্ছে না। এনিয়ে কক্সবাজারবাসী বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হচ্ছে। যা সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, সার্ভার বন্ধ থাকায় স্থানীয়দের নানামুখী দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, জন্মনিবন্ধন সনদ সব বয়সের মানুষের জন্য জরুরি একটি উপকরণ। জমি রেজিস্ট্রি, পাসপোর্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও ভোটার হওয়াসহ নানা প্রয়োজনীয় কাজে জন্মনিবন্ধন অত্যাবশ্যকীয়।

কিন্তু ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা ঢলের পর রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে জন্মনিবন্ধন সার্ভার বন্ধ করা হয়। এরপর থেকে স্থানীয়রা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছিল। এনিয়ে স্থানীয়রা বার বার প্রশাসনের কাছে ধর্ণা দিয়ে আসছেন।

এসব দূর্ভোগের কথা চিন্তা করে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। এখন বিষয়টি সরকারের উচ্চ মহলের বিবেচনাধীন।

পাঠকের মতামত: